পড়াশোনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পড়াশোনা লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১২

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ৫ম অধ্যায় (পর্ব ৮)

পঞ্চম অধ্যায়
তথ্য কমিশনের আর্থিক বিষয়াদি
তথ্য কমিশন তহবিল
১৯৷ (১) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে তথ্য কমিশন তহবিল নামে একটি তহবিল গঠিত হইবে৷

(২) তথ্য কমিশন তহবিল এর পরিচালনা ও প্রশাসন, এই ধারা এবং বিধির বিধান সাপেক্ষে, তথ্য কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকিবে৷

(৩) তথ্য কমিশন তহবিল হইতে প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের এবং সচিব ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও চাকুরীর শর্তাবলী অনুসারে প্রদেয় অর্থ প্রদান করা হইবে এবং তথ্য কমিশনের প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হইবে৷

(৪) তথ্য কমিশন তহবিলে নিম্নবর্ণিত অর্থ জমা হইবে, যথাঃ -

(ক) সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বাৎসরিক অনুদান;

(খ) সরকারের সম্মতিক্রমে কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান৷ 

বাজেট
২০৷ তথ্য কমিশন প্রতি বৎসর সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরবর্তী অর্থ-বৎ‍সরের বার্ষিক বাজেট বিবরণী সরকার কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট ফরমে অনুমোদনের জন্য সরকারের নিকট পেশ করিবে এবং উহাতে উক্ত অর্থ-বৎসরে সরকারের নিকট হইতে তথ্য কমিশনের কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হইবে উহার উল্লেখ থাকিবে৷
  তথ্য কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা
২১৷ (১) সরকার প্রতি অর্থ-বৎসরে তথ্য কমিশনের ব্যয়ের জন্য, উহার চাহিদা বিবেচনায়, উহার অনুকূলে নির্দিষ্টকৃত অর্থ বরাদ্দ করিবে এবং অনুমোদিত ও নির্ধারিত খাতে উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ হইতে ব্যয় করিবার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করা তথ্য কমিশনের জন্য আবশ্যক হইবে না৷

(২) এই ধারার বিধান দ্বারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৮ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মহা-হিসাব নিরীক্ষকের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হইয়াছে বলিয়া ব্যাখ্যা করা যাইবে না৷  

হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা

২২৷ (১) তথ্য কমিশন যথাযথভাবে উহার হিসাব রক্ষণ করিবে এবং হিসাবের বার্ষিক বিবরণী প্রস্তুত করিবে৷

(২) বাংলাদেশের মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, অতঃপর মহা-হিসাব নিরীক্ষক নামে অভিহিত, প্রতি বৎসর তথ্য কমিশনের হিসাব নিরীক্ষা করিবেন এবং নিরীক্ষা রিপোর্টের একটি করিয়া অনুলিপি সরকার ও তথ্য কমিশনের নিকট পেশ করিবেন৷

(৩) উপ-ধারা (২) মোতাবেক হিসাব নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে মহা-হিসাব নিরীক্ষক কিংবা তাহার নিকট হইতে এতদুদ্দেশ্যে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি তথ্য কমিশনের সকল রেকর্ড, দলিল দস্তাবেজ, নগদ বা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, জামানত, ভাণ্ডার এবং অন্যবিধ সম্পত্তি পরীক্ষা করিয়া দেখিতে পারিবেন এবং প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারগণ বা যে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করিতে পারিবেন৷

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১২

ধর্ম ও মানবসভ্যতা


বিতর্ক কেন করি? এই প্রশ্নের জবাবে মোটামুটি সব বিতার্কিক একটি কথাই বলবেন- আমরা যুক্তি দিয়ে সত্যকে বিচার করতে চাই। আমরা কুসংস্কার ও অজ্ঞতার ঊর্ধ্বে প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে নিজেদের দাবি করি। আর তাই যৌক্তিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে সত্যকে বিভিন্ন আঙ্গিকে দেখার প্রয়াস করি। অথচ সভ্যতার শুরু থেকে আজ অবধি সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ধর্ম নিয়ে সদা তর্কে লিপ্ত হলেও দেশের বিতর্কের মঞ্চে বিতর্ক করতে খুব বেশি দেখা যায়না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগবে বলে কিংবা হয়তো ধর্মীয় ইতিহাস সম্পর্কে খুব বেশি জ্ঞান না থাকার কারনে আয়োজক ও বিতার্কিক উভয়েই বিতর্কে ধর্মের প্রসঙ্গ সচেতনভাবে এড়িয়ে চলেন। যদিও বা কখনও ধর্ম নিয়ে বিতর্কের বিষয় নির্ধারন করা হয়, তখন সংজ্ঞায়নের বেড়াজালে ফেলে ধর্মের নেতিবাচকতা নিয়ে কথা না বলার সুকৌশল অবলম্বন করা হয়। অবস্থা দেখে মনে হয়, ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করলে যেন জাত চলে যাবে। তবে এটাও ঠিক যে, ধর্ম সম্পর্কে খুব অল্প জ্ঞান নিয়ে বিতর্ক করার চেয়ে এড়িয়ে চলা উত্তম। মানব সভ্যতা ও ধর্মীয় ইতিহাস নিয়ে আমার সীমিত পড়াশুনার ফলে অর্জিত কিছু তথ্য জানানোর জন্যে এই উদ্যোগ, যেন নতুন বিতার্কিকরা ভবিষ্যতে ধর্ম নিয়ে বিতর্ক করতে তথ্যাভাবে অস্বস্তিবোধ না করেন, ধর্মকে ছোট করার জন্যে কিংবা নাস্তিকতাবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে নয়।

ছোটবেলায় সমাজবিজ্ঞান বইয়ের সুবাদে আমরা সবাই জানি যে, আজ থেকে প্রায় ১৪০০০ বছর আগে “মনু” বা “মনা”- অর্থাৎ অতিপ্রাকৃত শক্তির ধারনা থেকে মুলত ধর্মের উদ্ভব। যদিও আব্রাহামীয়(Abraham/ইব্রাহীম(আঃ)এর উত্তরসূরি) ধর্মত্রয়(ইহুদীবাদ, খ্রিস্টবাদ ও ইসলাম) মতে প্রায় ৬৫০০ বছর আগ থেকে ধর্ম ও মানুষের উদ্ভব(আদমকে প্রথম মানুষ মনে করে), তবে বিভিন্ন সভ্যতায় মানুষের উদ্ভব সম্পর্কে ভিন্নমত লক্ষ্যনীয়-যেমন, গ্রীক ও রোমান সভ্যতায় ২৫৮৬৮ খ্রিস্টপূর্বে, মিশরীয় সভ্যতায় ২৮০০০ খ্রিস্টপূর্বে (দেবতাদের ১১৯৮৪ বছর, উপদেবতাদের ২৬৪৬ বছর ও মানুষের ১৭৬৮০ বছর), সুমেরীয় ও ব্যবীলননীয় সভ্যতায় ৪০০০০০ খ্রিস্টপূর্বে, চীনা সভ্যতায় ৩৬০০০ খ্রিস্টপূর্বে মানব সৃষ্টির ধারনা পাওয়া যায়। এছাড়া আধুনিক বিজ্ঞান আদিম মানুষের ফসিল দিয়ে প্রায় দেড় লাখ বছর পূর্বে মানুষের অস্তিত্ব প্রমান করেছে। তবে ঐতিহাসিকরা অন্তত এই বিষয়ে একমত যে, সভ্যতার শুরুর দিকের দেবীপ্রধান বহুঈশ্বরবাদের ধারনা ছিল মূলত মানুষের দুর্বলতা ও অজানার প্রতি ভয় থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ও মাতা প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। রাহুল সংকৃত্যায়নের “ভোলগা থেকে গঙ্গা” থেকে আমরা দেখতে পাই যে, আদিম যাযাবর জাতিগোষ্ঠীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধাকে বলা হত “মনা”-যার ঈশ্বর প্রদত্ত শক্তি ছিল বলে মনে করা হত। যদিও তৎকালীন সমাজব্যবস্থা মাতৃপ্রধান ছিল কিন্তু ক্রমান্বয়ে এই যোদ্ধারা যেহেতু সমাজের নিরাপত্তা তাদের হাতে ছিল, যাযাবর সমাজের নিয়ন্ত্রন নিজেদের কাছে নিয়ে নেয়। ধারনা করা হয়, কালের পরিক্রমায় এভাবেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আবির্ভাব ঘটে। আর প্যাগান দেবীদের হটিয়ে দেবতারা রাজত্ব শুরু করেন। সুমেরীয় সভ্যতার ইনানা, ব্যবীলনীয় সভ্যতার ইশথার, কানান(বর্তমান ইসরায়েল) সভ্যতার আনাত, মিশরীয় সভ্যতার আইসিস কিংবা গ্রীক সভ্যতার এপ্রোদিত দেবীদের তুলনায় এল, আমুন, রা, ক্যাওস, তিয়ামাত, আপসু, এপোলো, প্রমিথিউস, জিউস, পোসাইডন ও হেইডিসরা মানুষের কাছে অধিক পূজনীয় হয়ে উঠেন। আর পৃথিবীতে তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন রাজা বা ভূপতিরা। অনেক ইতিহাস বিশারদ মনে করেন যে,  শাসন কার্যের সুবিধার জন্য এবং শাসিত শ্রেণীকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রাচীন সমাজের অধিপতিরা ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। মিশরীয় সভ্যতার ফেরাউনরা যার উৎকৃষ্ট প্রমান। যারা জাদুর দেবী আইসিস এর উত্তরসূরি হিসেবে নিজেদের প্রচার করত। যদিও তারা আমুন ও রা এর মত পুরুষ দেবতাদের উপসনা করত। একই ভাবে ভারতীয় উপমহাদেশেও আমরা ধর্মের পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব দেখতে পাই। সনাতন ধর্মের প্রথম দিকে দেবীদের উপসনা করা হত এবং সমাজে কোন শ্রেনীভেদ ছিলনা। কিন্তু এর পরিবর্তন ঘটে যখন খ্রিষ্টপূর্ব ১৭০০ শতকের দিকে আর্য্যরা ইরান থেকে ইন্দো উপত্যকায় নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়, যা ঋগবেদে উল্লেখ আছে। রাহুল সংকৃত্যায়নের মতে, আর্য্যরাই প্রথম শ্রেণীপ্রথা(ব্রাক্ষ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) চালু করে এবং মানুষকে ত্যাগে উদ্ভুদ্ব করতে পুনর্জন্মের ধারনার প্রচার ঘটায়। আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, বাংলাদেশ ও কলকাতায় যেভাবে দূর্গা, লক্ষী, স্বরস্বতী, কালী দেবীদের পূজা হয়, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে ঠিক তার বিপরীতভাবে গণেষ, হনুমান, শিব, কার্তিক দেবতাদের পূজা হয়। নৃবিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ ও কলকাতার এই অঞ্চলে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থার ফলে মূলত এই পার্থক্য। যেমনটা আজও গারো উপজাতিদের মধ্যে বিদ্যমান। তবে ধর্মে পুরুষতান্ত্রিকতা আরও ব্যাপকতা লাভ করে একেশ্বরবাদ তথা আব্রাহামীয় ধর্মের বিকাশের পরে। বিশেষ করে ১৪৮০ থেকে ১৭৫০ সাল পর্যন্ত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ডাইনী শিকার(Witch Hunt) এর নামে যখন ৪০০০০ থেকে ৬০০০০ নারীকে চার্চের নির্দেষে হত্যা করা, তখন ধর্মে পুরুষদের নিয়ন্ত্রনের যুক্তি আরো জোরালো হয়।

ঐতিহাসিকদের মতে সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে গৃহীত একেশ্বরবাদ প্রচার করেন তেরাহ(Terah/আযার) এর পুত্র আব্রাহাম (Abraham/ইব্রাহীম(আঃ))। বাইবেলের জেনেসিস মতে, ১৮৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি ও তার জাতি মেসোপটেমিয়ার হারান(পশ্চিম তুরস্ক) থেকে ভূমধ্যসাগরীয় কানান অঞ্চলে আসেন এবং ‘ইয়াহওয়েহ’ বা ‘এলহিম’ এর ধর্ম প্রচার করেন। আব্রাহাম ফেরাউনদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তার সৎবোন সারাহকে বিয়ে করেন এবং তার ১০০ বছর বয়সে আইজ্যাক (Isaac/ইসহাক(আঃ))জন্মলাভ করেন। আমরা কোরবানীর ইতিহাসে ইব্রাহীম (আঃ) এর তার প্রিয় পুত্র ইসহাক(আঃ) এর ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত আছি। আইজ্যাক পরবর্তীতে কানানের (বর্তমান ইসরায়েল) পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপন করেন। তার পুত্র জ্যাকব(Jacob/ইয়াকুব), যিনি ইতিহাসে ইসরাঈল নামে পরিচিত এবং তার ১২ পুত্রের সম্মিলিত জাতিগোষ্ঠীকে ‘বনী ইসরাঈল’ জাতি বলা হয়। ইসরাঈলীরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে মনে করত এবং তাদের ঈশ্বর ‘ইয়াহওয়েহ’ কে সকল দেবতার ঊর্ধ্বে স্থাপন করত। আর ‘ইয়াহওয়েহ’ এর ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা মিশরে প্লেগের বিস্তার ও নীলনদের মহাস্রোতে ফেরাউন ও তাদের দেবতাদের পতনকে চিহ্নিত করে। তবে মিশর থেকে ফেরাউনদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে(কিংবা শাস্তি দিয়ে) যখন জ্যাকবের উত্তরসূরি মূসা(আঃ)(Moses) ও তার দল ইসরায়েলে আসেন, তখন থেকে সমগ্র ইসরায়েল এক ঈশ্বর ও ধর্মীয় চেতনায় আবদ্ধ হয়। আর তার নাম হয় “ইহুদীবাদ”। তবে ইহুদী শব্দের উত্থান মূলত জ়্যাকবের ৪র্থ পুত্র ইয়াহুদ(Judah/Yudah/Yahudh) থেকে। পরবর্তীতে ইয়াহুদ, লেভি, বেঞ্জামিন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠিকে সম্মিলিতভাবে ইহুদী বলা হত। ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল তারাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম জাতি এবং ‘ইয়াহওয়েহ’ তাদের পবিত্র পূণ্যভূমি ইসরায়েল এর রক্ষাকর্তা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩২ এর দিকে জেরুজালেমকে কেন্দ্র করে একটি স্বতন্ত্র জাতি গড়ে ওঠে। কিন্তু খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের দিকে বিস্তৃত রোমান সাম্রাজ্যের কাছে ৬ খ্রিস্টাব্দে পরাজিত হয়ে ইসরায়েলীরা জেরুজালেমের কর্তৃত্ব হারায়। আর রোমান সম্রাট আদ্রিয়ান(Hadrian) ১৩৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজধানী জেরুজালেমের নাম পরিবর্তন করে রাখেন এলিয়ে ক্যাপিতলিনা(Aelia Capitolina) এবং জুডিয়া(Judea) অঙ্গরাজ্যের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সিরিয়া প্যালেস্তাইন(Syaria Palestine)। পরবর্তীতে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে কনস্টান্টিন-I পুনরায় জেরুজালেম নামকরন করেন।

বনী ইসরাঈল জাতিতে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ নবী আসেন ডেভিড(David/দাঊদ(আঃ))ও সুলেমান(Solomon/সুলায়মান(আঃ)) এর উত্তরসূরি কুমারী মাতা ম্যারী এর পুত্র যীশু(Jesus/ঈসা(আঃ)-খ্রিস্টপূর্ব ৭-২ সন থেকে ৩০-৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্ম উভয়েই মনে করেন ঈশ্বরের অতিপ্রাকৃত শক্তির কৃপায় কুমারী ম্যারীর গর্ভে যীশুর আবির্ভাব। তবে অনেক ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ঐতিহাসিক মনে করেন যে, মিশরীয় জাদুর দেবী কুমারী আইসিস ও তার পুত্র হোরাসের জনপ্রিয় কাহিনী থেকেই ম্যারী ও যীশুর কাহিনীকে ধারন করা হয়েছে। যীশু জেরুজালেমে তার মতবাদ প্রচার করতে থাকেন, কিন্তু ইহুদীরা তাকে অধর্ম প্রচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন এবং রোমান গভর্নর পন্থিয়াস পিলাত (Pontius Pilate) তাকে ক্রুসে বিদ্ধ করার নির্দেষ দেন। যীশুর মৃত্যর পর(কিংবা পুনরুত্থানের পর) তার অনুসারীরা তার মতাদর্শের প্রচার শুরু করেন এবং যা শুরুর দিকে একেশ্বরবাদের ধারনা হিসেবে প্রচারিত হলেও পরবর্তীতে ত্রয়ীবাদ(Trinity-Father, Son & Holly Spirit) হিসেবে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে রোমান চার্চ প্রচার শুরু করে। যদিও ত্রয়ীবাদ নিয়ে রোমান ক্যাথলিক, অর্থোডক্স ও প্রোটেস্ট্যান্টদের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান, তবে সবাই এ বিষয়ে একমত যে, চার্চের কর্তৃত্ব(পোপ, বিশপ, ক্লার্জি) থাকবে পুরুষদের হাতে। মূলত চার্চের হাতেই ধর্মে পুরুষতান্ত্রিকতা ব্যাপকতা লাভ করে বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, যা পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মেও লক্ষ্যনীয়।

বনী ইসরাঈল জাতির শেষ নবী হলেন আব্রাহামের ত্যায্যপুত্র(ইহুদী ও খ্রিস্টধর্মমতে) ইসমাঈল এর বংশধর মুহম্মদ(সাঃ)-জন্মসূত্রে প্যাগান, (৫৭০ খ্রিস্টাব্দ-৬৩২ খ্রিস্টাব্দ) । তিনিও অন্যান্য প্রধান নবীদের মত ৪০ বছর বয়সে(!) নবুয়্যত প্রাপ্ত হন এবং ইসলাম ধর্মের প্রচার শুরু করেন। যদিও প্রথমে অন্যান্য আব্রাহামীয় ধর্মের মত ৬২০ খ্রিস্টাব্দ থেকে জেরুজালেমকে পবিত্র ভূমি হিসেবে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্র(ক্বিবলা) হিসেবে গণ্য করা হত, পরবর্তীতে ৬২০ খ্রিস্টাব্দে মুহম্মদের মিরাজের পরে তা মক্কার ক্বাবাতে পরিবর্তিত হয়। তবে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে, বনী ইসরাঈল জাতিকে ধর্মান্তরিত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং ইব্রাহীম ও তার পুত্র ইসমাঈল এর ক্বাবা শরীফ পুনঃনির্মানের কাহিনীতে উদ্ভুদ্ব হয়ে পরবর্তীতে মক্কাকে মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্র নির্ধারন করা হয়। যদিও জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ মুসলিম বিশ্বের প্রধান ৩টি মসজিদের অন্যতম হিসেবে গণ্য করা হয়। মূলত খ্রিস্টধর্ম ও ইসলামের আবির্ভাব বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় সংঘাতকে প্রভাবিত করে। কেননা এতদিন ধরে চলে আসা সনাতন ও ইহুদী ধর্মের অনুসারীরা যথাক্রমে আর্য ও বনী ইসরাঈল জাতি হিসেবে নিজেদের শ্রেষ্ঠতম জাতি মনে করত এবং এজন্যেই অন্য ধর্ম থেকে এই দুটি ধর্মে অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। কিন্তু খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম উভয় ধর্মই ধর্মান্তরকে প্রাধান্য দেয় এবং এই দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় যে, তাদের ধর্মই সমগ্র মানব জাতির জন্য। মূলত খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম ধর্মের এই দ্বান্দ্বিক অবস্থাই বিশ্বব্যাপী আন্তঃধর্মীয় সংঘাতের জন্ম দেয়, যা আজও বিদ্যমান।

খ্রিস্ট ধর্মের ব্যাপক বিস্তৃতির ফলে রোমান সম্রাট কনস্টান্টিন-I প্যাগান থেকে খ্রিস্টান হন এবং পুরো রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্মকে বৈধতা প্রদান করেন। ৩২৫ খ্রিস্টাব্দে ইহুদীদের জেরুজালেমে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়, শুধুমাত্র বছরে একবার প্রার্থনার কারন ছাড়া। ৩২৬ থেকে ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চার্চ ধর্ম প্রচারের নামে সকল প্যাগান দেব-দেবীর মূর্তি ভেঙ্গে ফেলে এবং খ্রিস্ট ধর্মের ব্যাপক প্রচার চালায়। ৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওমর ইয়ারমুকের যুদ্ধে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটান এবং জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নেন। মুহম্মদ ইবনে জারীর আল তারাবী’র মতে, খলিফা ওমর ও পাট্রিয়ার্ক সাফ্রোনিয়াস ঐকমত্যে পৌছান যে, জেরুজালেমে খ্রিস্টানরা স্বাধীনভাবে থাকতে পারবে কিন্তু ইহুদীদের নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। ইহুদীদের প্রার্থনার জায়গা  Temple Mount এর পবিত্র পাথর (Dome of Rock) কে মসজিদ-উল-মুকাদ্দাস এ রুপান্তর করা হয়, কেননা মুসলমানরা মনে করেন যে, এখান থেকেই মুহম্মদ মিরাজ যাত্রা আরম্ভ করেন। ৬৩৬ থেকে ৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জেরুজালেম, মিশর, সিরিয়া ও তুরস্কে রাশেদীন, উমায়্যাদ ও আব্বাসীদ খিলাফত বহাল থাকে। ৯৬৯ থেকে ১০৯৮ পর্যন্ত ছিল ফাতিমিদ খিলাফতের সময়কাল। এই সময়ের মধ্যে ইসলামী সাম্রাজ্য ব্যাপক বিস্তার লাভ করে, কিন্তু একই সাথে চার্চের সাথেও বিরোধ বাড়তে থাকে।

ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় বিরোধ বাধে জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নিয়ে, আর ইতিহাসে যাকে ‘ক্রুসেড’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। ১০৯৫ সনে পোপ আরবান-II বাইযেন্টাইন সম্রাট আলেক্সিস কোমনেনস এর আবেদনে সাড়া দিয়ে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে মুসলিম সাম্রাজ্যের হাত থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য ‘প্রথম ক্রুসেড’এর ডাক দেন। ‘Just War’ তত্ব মূলত ক্রুসেডকে গ্রহনযোগ্যতা দেয়ার জন্য তিনিই প্রথম ব্যবহার করেন। ১২০০০০ ফ্র্যাঙ্ক(ফ্রেঞ্চভাষী পশ্চিমা খ্রিস্টান) ক্রুসেডে অংশ নেয় এবং ১০৯৯ সনে চার্চ জেরুজালেমের দখল নেয়। তারা মসজিদ-উল-মুকাদ্দাসকে চার্চে রুপান্তর করে। ১০৯৯ থেকে ১১৩৭ পর্যন্ত জেরুজালেম চার্চের অধীনে থাকে। তারা জেরুজালেম, এডেসা, এন্টিওক ও ত্রিপলী এই ৪ ভাগে ক্রুসেড রাজ্যকে ভাগ করে। যদিও তারা লেবাননের নিয়ন্ত্রন নেয়ারও চেষ্টা করে, কিন্তু দামেস্কের শাসক জহির আলদীন আতাবেকের কাছে পরাজিত হয়। ১১৩৭ সালে ইমাদ আদ্দীন জেঙ্গী এডেসা দখল করে। আর পুনরায় চার্চের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য ১১৪৭-১১৪৯ পর্যন্ত ‘দ্বিতীয় ক্রুসেড’ পরিচালিত হয়। ফরাসী রাজা লুইস-VII ও পশ্চিম জার্মানীর রাজা কনরাড-III ১১৪৭ এ এডেসার উদ্দেশ্যে তার সেনাবাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, কিন্তু জেঙ্গীর কাছে পরাজিত হয়। তবে এডেসায় ব্যর্থ তারা পর্তুগালের রাজা আফনসো-I এর সাথে যৌথভাবে আক্রমন করে মুসলিমদের কাছ থেকে লিসবন দখল করে নেয়। তবে ক্রমান্বয়ে মুসলিম সাম্রাজ্য শক্তিশালী হতে থাকে এবং ১১৮৭ সনে হাত্তিন(Battle of the Horns of Hattin) এর যুদ্ধে সালাউদ্দীন ইউসুফ ইবনে আইউব চার্চের কাছ থেকে পুনরায় জেরুজালেমের দখল নেয়। তিনি ইহুদী ও অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের সাথে সমঝোতায় আসেন এবং মসজিদ-উল-মুকাদ্দাস পুনরাস্থাপন করেন। ১১৯২ সনে ‘সিংহহৃদয়’ রিচার্ড এর নেতৃত্বে ‘তৃতীয় ক্রুসেড’ পরিচালিত হয়, কিন্তু তারা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। তবে রিচার্ড  ও সালাউদ্দিন রামলা চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিমা খ্রিস্টানদের জেরুজালেমে স্বাধীনভাবে ধর্মচর্চার সুযোগ দেন। কিন্তু চার্চ থেমে থাকেনি। ১২৭২ সাল পর্যন্ত পবিত্র ভূমি পুনরুদ্ধারের নামে সর্বমোট ৯টি ক্রুসেড সংঘঠিত হয়। আর ধর্মের নামে লক্ষাধিক মুসলমান ও ইহুদী হত্যা করা হয়। তবে প্রায় সবকটি ক্রুসেডে পরাজিত হয় চার্চ। পরবর্তীতে ১৩০০ সালে মোঙ্গলীয়রা আর ১৩৮২ সালে মামলূক সাম্রাজ্য জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নেয়। তবে পূণ্যভূমির নিয়ন্ত্রনের যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। ১৫১৬ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের(Turkish Empire) সুলতান সেলিম, আলেপ্পো ও গাজা’র যুদ্ধে জেরুজালেমে মামলূক সাম্রাজ্যের পতন ঘটান। ১৭৯৯ সালে নেপলিয়ন বেনাপোর্ড মিশর ও সিরিয়ার মাধ্যমে জেরুজালেম দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে(১৯১৭ সালে), বৃটিশ সেনাবাহিনীর কাছে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। আর ১৯২৪ সাল থেকে শুরু হয় জিওনিস্ট বিদ্রোহ(Zionist Revolution), যা ছিল মূলত ইসরায়েল রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধ ইহুদী আন্দোলন। তবে ১৯৩৩ সালে যখন হিটলারের নাৎসী বাহিনী ক্ষমতায় আসেন, ইহুদীদের নিশ্চিহ্ন করতে ১৯৪৫ পর্যন্ত চলে নৃসংশতম হত্যাকান্ড যা ইতিহাসে ‘হলোকাস্ট’ নামে পরিচিত। এই হত্যাকান্ডে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ইহুদীকে হত্যা করা হয়। ইহুদীদের হত্যার পিছনে অনেক ঐতিহাসিক হিটলারের ধর্মীয় অহংবোধকে দায়ী করেন। ধারনা করা করা, ইসরাঈলীদের মত হিটলারও ইন্দো-আর্য জাতিকে(যার একটি ধারা পশ্চিম জার্মানীরা) শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে বিশ্বাস করতেন এবং যার কারনে নাৎসী বাহিনীর প্রতীক ‘সোয়াস্ত্রিকা’-হিন্দুদের(আর্যদের) থেকে অনুপ্রানিত। এছাড়া ইহুদীদের প্রতি রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিদ্বেষ্পূর্ণ মনোভাবও তাকে প্রভাবিত করেছে বলে অনেকে মনে করেন। নিজ ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য হিটলার হয়তো ইহুদীদের পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে ফেলতেন যদি না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর কাছে তার পরাজয় না ঘটত। আর দীর্ঘদিনের জিওনিস্ট বিদ্রোহের পর জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে ১৯৪৭ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম হয়। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ইসরায়েল রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম মূলত বনী ইসরাঈল জাতিকে তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুত পবিত্র ভূমিতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তবে অনেকে এও মনে করেন যে, ইসরায়েল কখনই শুধুমাত্র বনী ইসরাঈল জাতির ছিলনা। জেরুজালেমে ঐতিহাসিকভাবে ইহুদী, খ্রিস্টান ও পরবর্তীতে মুসলমান, সবারই সহাবস্থান লক্ষ্যনীয়। তাই ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম অনেকেই জাতিসংঘের পক্ষপাতিত্ব বলে মনে করেন। কিংবা অনেকে মনে করেন যে, আপাত দৃষ্টিতে এটি ধর্ম যুদ্ধের অবসান ঘটালেও এটি ভবিষ্যতে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম সাম্রাজ্যের উপর নিয়ন্ত্রনের জন্য পশ্চিমা শক্তির এক ষড়যন্ত্র। আর এই বর্তমান সময়ে অনেকেই উক্ত ধারনার সত্যতা দেখতে পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে দুটি জিনিসের সমাপ্তি ঘটে-১.ধর্মীয় যুদ্ধ ও ২.সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার। তবে এরপরেও যে, ধর্ম নিয়ে সংঘাত হয়নি তা নয়। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্ব, ইরাকের শিয়া-সুন্নী সংঘাত, রুয়ান্ডার হুতো-তুতসী সংঘাত, গুজরাটের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা, চেচনীয়া-বসনিয়া সংঘাত, তিব্বত-চীন দ্বন্দ্ব কিংবা অতি সাম্প্রতিক মায়ানমারের রোহিঙ্গা-বৌদ্ধ দাঙ্গা ইত্যাদি বিভিন্ন সংঘাত আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয় ধর্মের নামে এখন পর্যন্ত কত নির্দোষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আর খুব দ্রুতই যে, এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে-সে ব্যাপারেও অনেকে সন্দিহান। তাদেরই একজন সমাজবিজ্ঞানী স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন।

স্নায়ু যুদ্ধের শেষে অনেকের মত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা মনে করেন যে, বিশ্ব ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে পৌছেচে। তিনি ১৯৯২ সালে তার The End of History and the Last Manবইয়ে জার্মান দার্শনিক হেগেলের তত্ত্ব দিয়ে সভ্যতার সংঘাতের সম্ভাবনাকে নাকোচ করে দেন। তবে হান্টিংটন ফুকুয়ামার সাথে একমত হতে পারননি। ১৯৯৩ সালে তিনি ‘সভ্যতার সংঘাত’ (Clash of the Civilization) তত্ত্ব প্রকাশ করেন। হান্টিংটন মনে করেন যে, অধিবিদ্যার(Ideology) যুগের সমাপ্তি ঘটলেও সভ্যতার সংঘাতের সমাপ্তি ঘটেনি। তিনি মনে করেন যে, আগামীর বিশ্ব মূলত সংস্কৃতি ও ধর্মীয় সংঘাতে লিপ্ত হবে। আর এই সংঘাত সংগঠিত হবে মূলত পশ্চিম ও মুসলিম সভ্যতার মধ্যে। রাশিয়া, জাপান ও ভারতকে তিনি Swing Civilization নাম দেন, কেননা তারা যেকোন পক্ষকে সমর্থন করতে পারে। উদাহরনস্বরূপ, রাশিয়া তার দক্ষিণ সীমান্তের মুসলিমদের(চেচনিয়া) সাথে সংঘাতে জড়ালেও অপরদিকে ইরানের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করছে ভবিষ্যত মুসলিম-অর্থোডক্স সংঘাত এড়াতে এবং তেলের প্রবাহ নিশ্চিত করতে। এছাড়া মুসলিম-চীন সম্পর্ক, বিশেষ করে ইরান, পাকিস্তান, সিরিয়ার মত দেশের সাথে চীনের সম্পর্ক এক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। হান্টিংটন মনে করেন যে, ঐতিহাসিকভাবে চলে আসা খ্রিস্টান-মুসলিম দ্বন্দ্ব এবং বিশ্বব্যাপী পশ্চিমা সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তার ও পশ্চিমা সমাজে মুসলিমদের উপর নেতিবাচক আচরন অনেক ক্ষেত্রে মৌলবাদের উত্থান ঘটাতে পারে এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে ধাবিত করতে পারে। তিনি সভ্যতার দ্বন্দ্বের ৬টি মৌলিক কারন আলোচনা করেন। যেগুলো হলঃ-

১. শতবছর ধরে ইতিহাস, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, প্রথা ও ধর্মের কারনে সৃষ্ট যে সভ্যতার ভেদাভেদ, তা খুব দ্রুত অবসান হবেনা।
২. ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে সাংস্কৃতিক মিথষ্ক্রিয়ার ফলে প্রতিটি সভ্যতা তার স্বকীয়তা নিয়ে অধিক সচেতন হবে।
৩. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলে যখন মানুষ তার নিজস্বতা হারিয়ে বিশ্বমানব হয়ে উঠছে তখন ধর্ম মানুষকে একটি স্বতন্ত্র পরিচয় ও জাতিস্বত্ত্বার পরিচয় দিয়েছে।
৪. একদিকে পশ্চিমা সভ্যতা যেখানে ক্ষমতার শীর্ষে, অন্যদিকে বাকি সভ্যতাগুলো চাইছে মূলে ফিরে যেতে। প্রাচ্য ও পশ্চিমের এই দ্বিমুখী অবস্থান সভ্যতার সংঘাতকে প্রভাবিত করতে পারে।
৫. রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো যত দ্রুত সমাধান করা সম্ভব, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র ও পার্থক্য নিয়ে সমঝোতায় আসা ততই দুরূহ।
৬. আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সভ্যতার সচেতনাকে প্রভাবিত করবে।

হান্টিংটন মনে করেন যে, আন্তঃসভ্যতা দ্বন্দ্ব মূলত দুইভাবে সংঘটিত হবে-১.ফল্ট লাইন সংঘাত ২.কোর লাইন সংঘাত। আর তাই সামরিক বা অর্থনৈতিক ক্ষমতার প্রয়োগ, অন্য সভ্যতার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরন, সভ্যতার আধিপত্য কিংবা একটি সভ্যতার বিশ্বাস ও মূল্যবোধ জোরপূর্বক অন্য সভ্যতার উপর চাপিয়ে দেয়া ইত্যাদি বিভিন্ন কারনে সভ্যতার সংঘাত অনিবার্য। আর বর্তমান বিশ্বে পশ্চিমা সভ্যতার আধিপত্য এবং মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরন- হান্টিংটনের ধারনাকে আরও শক্ত করে। তবে অনেকেই আছেন যারা হান্টিংটনের মতবাদের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেন। অমর্ত্য সেন(১৯৯৯) মনে করেন যে, “পশ্চিমা সভ্যতাসহ সকল সভ্যতারই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র রয়েছে। তবে তা স্বত্ত্বেও বিংশ শতকে গনতন্ত্রের বিপ্লব শুধই পশ্চিমা ধারনা নয়, প্রাচ্যও এর সাথে একমত। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনেক ইস্যুতে আজ সভ্যতারগুলোর মধ্যে খুব বেশি বিরোধ নেই”। হান্টিংটনের মতবাদের বিপরীত দুটি উল্লেখযোগ্য মতবাদ হল-১.ইরানের রাষ্ট্রপতি মুহাম্মাদ খাতামি’র ২০০১ সালের ‘সভ্যতার সংলাপ’ এবং ২০০৫ সালে জাতিসংঘের সাধারন সভায় উত্থাপিত স্পেনের রাষ্ট্রপতি, হোসে লুইস রদ্রিগুয়েজ ও তুরস্কের প্রধামন্ত্রী, তায়ীপ এর্দোগান এর সম্মিলিত মতাবাদ-‘সভ্যতার মৈত্রী’। উভয় মতবাদই ধারনা করে যে, মুসলিম ও পশ্চিমা সভ্যতার সাথে আলোচনা ও মতৈক্যের মাধ্যমে বিশ্বশান্তি নিশ্চিত হবে।

মানব সভ্যতার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ধর্মের উদ্ভব, বিকাশ এবং এর সাথে জড়িয়ে থাকা সভ্যতাগুলোর আচরন আমাদের কতগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন করে- কেন মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিলোপ ধর্মে পুরুষদের প্রভাব বাড়িয়ে তোলে, কেন বিশ্বের প্রধান তিনটি ধর্মই আব্রাহামের জাতির দ্বারা প্রচারিত, কেন শাসক গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী ধর্মের ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে আর কেনই বা নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের জন্য অন্য ধর্মের নিরীহ মানুষদের নিজ ধর্মে রূপান্তর কিংবা হত্যা করতে হবে? চায়ের দোকানে কিংবা মেসের আড্ডায় অনেক তর্ক হয় এই বিষয়ে। কিন্তু একমাত্র বিতার্কিকরাই পারেন গঠনমূলক আলোচনা করতে। বিতর্কের জয় হোক।

তথ্যসূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়া
২. ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’, রাহুল সংকৃত্যায়ন
৩. ‘The History of God’, Karen Armstrong
৪. ‘The Chariots of God’, Eric Von Daniken




The Descendents of Abraham
লেখক সানাউল হক হিমেল
সাবেক সভাপতি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ডিবেট ক্লাব


 
লেখাটি (লেখাটি EWUDC Debate Spree'12 এর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত

বুধবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১২

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ৭ম অধ্যায় (পর্ব ৭)

সপ্তম অধ্যায়
আপীল, অভিযোগ, ইত্যাদি

২৪৷ (১) কোন ব্যক্তি ধারা ৯ এর উপ-ধারা (১), (২) বা (৪) এ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য লাভে ব্যর্থ হইলে কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোন সিদ্ধান্তে সংক্ষুদ্ধ হইলে উক্ত সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার, বা ক্ষেত্রমত, সিদ্ধান্ত লাভ করিবার পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল করিতে পারিবেন৷

(২) আপীল কর্তৃপক্ষ যদি এই মর্মে সন্তষ্ট হন যে, আপীলকারী যুক্তিসংগত কারণে উপ-ধারা (১) এ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপীল দায়ের করিতে পারেন নাই, তাহা হইলে তিনি উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও আপীল আবেদন গ্রহণ করিতে পারিবেন৷

(৩) আপীল কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (১) বা (২) এর অধীন আপীল আবেদন প্রাপ্তির পরবর্তী ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে-

(ক) আপীল আবেদনকারীকে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করিবেন; অথবা

(খ) তদ্ বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য না হইলে আপীল আবেদনটি খারিজ করিয়া দিবেন৷


(৪) উপ-ধারা (৩) এর অধীন তথ্য প্রদানের জন্য নির্দেশিত হইলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ নির্দেশ প্রাপ্তির তারিখ হইতে ধারা ৯ এর, ক্ষেত্রমত, উপ-ধারা (১), (২) বা (৪) এ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আপীল আবেদনকারীকে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন৷
২৫৷ (১) কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবে, যথাঃ-


(ক) ধারা ১৩ এর উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কারণে তথ্য প্রাপ্ত না হইলে;

(খ) ধারা ২৪ এর এর অধীন প্রদত্ত আপীলের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ হইলে;

(গ) ধারা ২৪ এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য প্রাপ্তি বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য প্রদান সংক্রান সিদ্ধান্ত প্রাপ্ত না হইলে৷


(২) উপ-ধারা (১) এর দফা (ক) তে উল্লিখিত বিষয়ে যে কোন সময় এবং দফা (খ) ও (গ) তে উল্লিখিত বিষয়ে উক্তরূপ সিদ্ধান্ত প্রদানের তারিখ বা, ক্ষেত্রমত, সময়সীমা অতিক্রান্ত হইবার তারিখ হইতে পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন৷

(৩) তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, অভিযোগকারী যুক্তিসংগত কারণে উপ-ধারা (২) এ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অভিযোগ দায়ের করিতে পারেন নাই, তাহা হইলে তথ্য কমিশন উক্ত সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযোগ গ্রহণ করিতে পারিবেন৷

(৪) কোন অভিযোগের ভিত্তিতে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, কোন কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এই আইনের বিধানাবলী অনুসরণে করণীয় কোন কার্য করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন বা করণীয় নয় এমন কার্য করিয়াছেন তাহা হইলে তথ্য কমিশন এই ধারার অধীন উক্ত কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে৷

(৫) উপ-ধারা (১) এর অধীন অভিযোগ প্রাপ্তির পর কিংবা উপ-ধারা (৪) এর অধীন কোন কার্যক্রম গ্রহণের প্রয়োজন হইলে প্রধান তথ্য কমিশনার উক্ত অভিযোগটি স্বয়ং অনুসন্ধান করিবেন অথবা অনুসন্ধানের জন্য অন্য কোন তথ্য কমিশনারকে দায়িত্ব প্রদান করিবেন৷

(৬) উপ-ধারা (৫) এ উল্লিখিত দায়িত্ব গ্রহণ বা প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অভিযোগের অনুসন্ধান সম্পন্ন করিয়া প্রধান তথ্য কমিশনার বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের জন্য একটি সিদ্ধান্ত কার্যপত্র প্রস্তুত করিবেন৷

(৭) উপ-ধারা (৬) এ উল্লিখিত সিদ্ধান্ত কার্যপত্র তথ্য কমিশনের পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করিতে হইবে এবং তথ্য কমিশন উহার সভায় আলোচনাক্রমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে৷

(৮) এই ধারায় উল্লিখিত কোন অভিযোগের অনুসন্ধানকালে যে কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয় সেই কর্তৃপক্ষ বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে, তাহার সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ প্রদান করিতে হইবে৷

(৯) কোন অভিযোগের বিষয়বস্তুর সহিত তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকিলে তথ্য কমিশন উক্ত তৃতীয় পক্ষকেও বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগ প্রদান করিবে৷

(১০) উপ-ধারা (১) এর অধীন প্রাপ্ত অভিযোগ তথ্য কমিশন সাধারণভাবে ৪৫ (পয়ঁতাল্লিশ) দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করিবে, তবে, ক্ষেত্র বিশেষে, স্বাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ বা তদন্ত সম্পাদন ইত্যাদি কারণে বর্ধিত সময়ের প্রয়োজন হইলে উক্ত বর্ধিত সময়ের মধ্যে অভিযোগ নিষ্পন্ন করা যাইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, অভিযোগ নিষ্পত্তি সময়সীমা, বর্ধিত সময়সহ, কোনক্রমেই সর্বমোট ৭৫ (পঁচাত্তর) দিনের অধিক হইবে না৷

(১১) এই ধারার অধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্য কমিশনের নিম্নরূপ ক্ষমতা থাকিবে, যথাঃ-

(ক) কোন কর্তৃপক্ষ বা, ক্ষেত্রমত, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা যাহা এই আইনের বিধান মোতাবেক গ্রহণ করা প্রয়োজন, যথাঃ-

(অ) অনুরোধকৃত তথ্য সুনির্দিষ্ট পন্থায় প্রদান;

(আ) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ;

(ই) বিশেষ কোন তথ্য বা বিশেষ ধরনের তথ্যাবলী প্রকাশ ;

(ঈ) তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে উক্ত কর্তৃপক্ষের পালনীয় পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনয়ন;

(উ) কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের তথ্য অধিকার বিষয়ক উন্নত প্রশিক্ষণ;

(ঊ) কোন ক্ষতি বা অন্য কোন প্রকার দুর্ভোগের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান;

(খ) এই আইনে বর্ণিত কোন জরিমানা আরোপ করা;

(গ) কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা;

(ঘ) অভিযোগ খারিজ করা;

(ঙ) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নূতনভাবে তথ্যের শ্রেণীবদ্ধকরণ;

(চ) তথ্যের প্রকৃতি, শ্রেণীবিন্যাসকরণ, সংরক্ষণ, প্রকাশ ও সরবরাহ সংক্রান্ত ইত্যাদি বিষয়ে এই আইনের আলোকে ব্যাখ্যা প্রদান;




(১২) এই ধারার অধীন প্রদত্ত তথ্য কমিশনের সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক হইবে৷

(১৩) তথ্য কমিশন ইহার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে৷

(১৪) তথ্য কমিশন প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে অভিযোগ নিষ্পত্তির অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে৷

২৬৷ কোন অভিযোগের পক্ষসমূহ তথ্য কমিশনের সামনে ব্যক্তিগতভাবে বা আইনজীবীর মাধ্যমে তাহাদের বক্তব্য উপস্থাপন করিতে পারিবেন ৷ 

২৭৷ (১) কোন অভিযোগ নিষ্পত্তির সূত্রে কিংবা অন্য কোনভাবে তথ্য কমিশনের যদি এই মর্মে বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা -

(ক) কোন যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল গ্রহণ করিতে অস্বীকার করিয়াছেন;

(খ) এই আইন দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনুরোধকারীকে তথ্য প্রদান করিতে কিংবা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করিতে ব্যর্থ হইয়াছেন;
(গ) অসদুদ্দেশ্যে তথ্য প্রাপ্তির কোন অনুরোধ বা আপীল প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন;

(ঘ) যে তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ করা হইয়াছিল তাহা প্রদান না করিয়া ভুল, অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর বা বিকৃত তথ্য প্রদান করিয়াছেন;

(ঙ) কোন তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করিয়াছেন-

তাহা হইলে তথ্য কমিশন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উক্তরূপ কার্যের তারিখ হইতে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা হারে জরিমানা আরোপ করিতে পারিবে, এবং এইরূপ জরিমানা কোনক্রমেই ৫০০০ (পাঁচ হাজার) টাকার অধিক হইবে না৷

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন জরিমানা আরোপের পূর্বে তথ্য কমিশন, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার বক্তব্য পেশ করিবার সুযোগ প্রদান করিবে৷

(৩) তথ্য কমিশন যদি এই মর্মে সন্তষ্ট হয় যে, নাগরিকের তথ্য প্রাপ্তিতে উপ-ধারা (১) এ বর্ণিত কার্য করিয়া কোন কর্মকর্তা বিঘ্ন সৃষ্টি করিয়াছেন, তাহা হইলে তথ্য কমিশন, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত জরিমানা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এহেন কার্যকে অসদাচরণ গণ্য করিয়া তাহার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে সুপারিশ করিতে পারিবে এবং এই বিষয়ে গৃহীত সর্বশেষ ব্যবস্থা তথ্য কমিশনকে অবহিত করিবার জন্য উক্ত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করিতে পারিবে৷

(৪) এই ধারার অধীন পরিশোধযোগ্য কোন জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না হইলে তাহা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট হইতে Public Demands Recovery Act, 1913 (Act IX of 1913) এর বিধান অনুযায়ী বকেয়া ভূমি রাজস্ব যে পদ্ধতিতে আদায় করা হয় সেই পদ্ধতিতে আদায়যোগ্য হইবে৷
২৮৷ এই আইনের অধীন আপীল বা অভিযোগ দায়েরের ক্ষেত্রে Limitation Act, 1908 (Act IX of 1908) এর বিধানাবলী, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, যতদূর সম্ভব, প্রযোজ্য হইবে৷ 


২৯৷ এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া গণ্য কোন কার্য, গৃহীত কোন ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোন আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে, এই আইনে উল্লিখিত আপীল কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা, ক্ষেত্রমত, তথ্য কমিশনের নিকট অভিযোগ দায়ের ব্যতীত, কোন আদালতে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না৷ 

শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ৬ষ্ঠ অধ্যায় (পর্ব ৬)

ষষ্ঠ অধ্যায়
তথ্য কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী
২৩৷ (১) তথ্য কমিশনের একজন সচিব থাকিবেন৷

(২) এই আইনের অধীন তথ্য কমিশন উহার কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় সংখ্যক অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবে৷

(৩) সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, ভাতা ও চাকুরীর শর্তাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে৷

(৪) সরকার, তথ্য কমিশনের অনুরোধক্রমে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কমিশনে প্রেষণে নিয়োগ করিতে পারিবে৷

শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১২

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ৪র্থ অধ্যায় (পর্ব ৫)

 চতুর্থ অধ্যায়
তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি

তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা ১১। (১) এই আইন কার্যকর হইবার পর, অনধিক ৯০ (নব্বই) দিনের মধ্যে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে এবং উহার বিধান অনুসারে তথ্য কমিশন নামে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠিত হইবে।
(২) তথ্য কমিশন একটি সংবিধিবদ্ধ স্বাধীন সংস্থা হইবে এবং ইহার স্থায়ী ধারাবাহিকতা ও একটি সাধারণ সীলমোহর থাকিবে এবং এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, উহার স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন করিবার, অধিকারে রাখিবার এবং হস্তান্তর করিবার ক্ষমতা থাকিবে এবং ইহার নামে ইহা মামলা দায়ের করিতে পরিবে বা ইহার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা যাইবে।

(৩) তথ্য কমিশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকায় থাকিবে এবং কমিশন, প্রয়োজনে, বাংলাদেশের যে কোন স্থানে উহার শাখা কার্যালয় স্থাপন করিতে পারিবে। 

তথ্য কমিশন গঠন

১২৷ (১) প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্য ২ (দুই) জন তথ্য কমিশনার সমন্বয়ে তথ্য কমিশন গঠিত হইবে, যাহাদের মধ্যে অন্যূন ১ (এক) জন মহিলা হইবেন৷

(২) প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের প্রধান নির্বাহী হইবেন৷

(৩) তথ্য কমিশনের কোন পদে শূন্যতা বা উহা গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে তথ্য কমিশনের কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎসম্পর্কে কোন প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না৷ 
তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
১৩৷ (১) কোন ব্যক্তি নিম্নলিখিত কারণে কোন অভিযোগ দায়ের করিলে তথ্য কমিশন, এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, উক্ত অভিযোগ গ্রহণ, উহার অনুসন্ধান এবং নিষ্পত্তি করিতে পারিবে, যথাঃ-

(ক) কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না করা কিংবা তথ্যের জন্য অনুরোধপত্র গ্রহণ না করা ;

(খ) কোন তথ্য চাহিয়া প্রত্যাখ্যাত হইলে;

(গ) তথ্যের জন্য অনুরোধ করিয়া, এই আইনে উল্লিখিত নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে কোন জবাব বা তথ্য প্রাপ্ত না হইলে;

(ঘ) কোন তথ্যের এমন অংকের মূল্য দাবী করা হইলে, বা প্রদানে বাধ্য করা হইলে, যাহা তাহার বিবেচনায় যৌক্তিক নয়;

(ঙ) অনুরোধের প্রেক্ষিতে অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদান করা হইলে বা যে তথ্য প্রদান করা হইয়াছে উহা ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর বলিয়া মনে হইলে;

(চ) এই আইনের অধীন তথ্যের জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন বা তথ্য প্রাপ্তি সম্পর্কিত অন্য যে কোন বিষয়৷

(২) তথ্য কমিশন স্ব-প্রণোদিত হইয়া অথবা কোন অভিযোগের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধান করিতে পারিবে৷

(৩) নিম্নলিখিত বিষয়ে Code of Civil Procedure, 1908 (Act V of 1908) এর অধীন একটি দেওয়ানী আদালত যে ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবে তথ্য কমিশন বা, ক্ষেত্রমত, প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারও এই ধারার অধীন সেইরূপ ক্ষমতা প্রয়োগ করিতে পারিবেন, যথাঃ-


(ক) কোন ব্যক্তিকে তথ্য কমিশনে হাজির করিবার জন্য সমন জারী করা এবং শপথপূর্বক মৌখিক বা লিখিত প্রমাণ, দলিল বা অন্য কোন কিছু হাজির করিতে বাধ্য করা;

(খ) তথ্য যাচাই ও পরিদর্শন করা;

(গ) হলফনামাসহ প্রমাণ গ্রহণ করা;

(ঘ) কোন অফিসের কোন তথ্য আনয়ন করা;

(ঙ) কোন সাক্ষী বা দলিল তলব করিয়া সমন জারী করা; এবং

(চ) এই আইনের উদ্দেশ্যপূরণকল্পে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত অন্য যে কোন বিষয়৷

(৪) অন্য কোন আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন কোন অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তথ্য কমিশন বা, ক্ষেত্রমত, প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনার কোন কর্তৃপক্ষের নিকট রক্ষিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট যে কোন তথ্য সরেজমিনে পরীক্ষা করিতে পারিবেন৷

(৫) তথ্য কমিশনের কার্যাবলী হইবে নিম্নরূপ, যথাঃ-

(ক) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, প্রকাশ, প্রচার ও প্রাপ্তির বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান;

(খ) কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে অনুরোধের পদ্ধতি নির্ধারণ ও, ক্ষেত্রমত, তথ্যের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ;

(গ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে নীতিমালা এবং নির্দেশনা প্রণয়ন ও প্রকাশ;

(ঘ) তথ্য অধিকার সংরক্ষণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান বা আপাততঃ বলবত্‍ অন্য কোন আইনের অধীন স্বীকৃত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা করা এবং উহার কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য অসুবিধাসমূহ চিহ্নিত করিয়া উহা দূরীকরণার্থে সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

(ঙ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে বাধাসমূহ চিহ্নিত করা এবং যথাযথ প্রতিকারের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

(চ) তথ্য অধিকার বিষয়ক চুক্তিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলাদির উপর গবেষণা করা এবং উহা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান;

(ছ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে তথ্য অধিকার সম্পর্কিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দলিলের সহিত বিদ্যমান আইনের সাদৃশ্যতা পরীক্ষা করা এবং বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে উহা দূরীকরণার্থে সরকার বা, ক্ষেত্রমত, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান;

(জ) তথ্য অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক দলিল অনুসমর্থন বা উহাতে স্বাক্ষর প্রদানে সরকারকে পরামর্শ প্রদান;

(ঝ) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে গবেষণা করা এবং শিক্ষা ও পেশাগত প্রতিষ্ঠানকে উক্তরূপ গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা প্রদান;

(ঞ) সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর নাগরিকদের মধ্যে তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রচার এবং প্রকাশনা ও অন্যান্য উপায়ে তথ্য অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণ;

(ট) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আইন ও প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রণয়নের ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান;

(ঠ) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মরত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান;

(ড) তথ্য অধিকার বিষয়ে গবেষণা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম বা ওয়ার্কশপের আয়োজন এবং অনুরূপ অন্যবিধ ব্যবস্থার মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রচার;

(ঢ) তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষকে কারিগরী ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান;

(ণ) তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল স্থাপন; এবং

(ত) তথ্য অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের বিষয়ে অন্য কোন আইনে গৃহীত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা করা৷ 
বাছাই কমিটি
১৪৷ (১) প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনার নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত ৫ (পাঁচ) জন সদস্য সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠিত হইবে, যথাঃ -


(ক) প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি, যিনি উহার সভাপতিও হইবেন;

(খ) মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার;

(গ) সংসদ কার্যকর থাকাকালীন অবস্থায় স্পিকার কর্তৃক মনোনীত সরকারী দলের একজন এবং বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য;

(ঘ) সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকগণের মধ্য হইতে সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন প্রতিনিধি৷


(২) তথ্য মন্ত্রণালয় উপ-ধারা (১) এর অধীন বাছাই কমিটি গঠনে এবং উক্ত বাছাই কমিটির কার্য-সম্পাদনে প্রয়োজনীয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবে৷

(৩) অন্যূন ৩ (তিন) জন সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম গঠিত হইবে৷

(৪) বাছাই কমিটি, প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনার নিয়োগের নিমিত্ত রাষ্ট্রপতির নিকট, সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে, প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে ২ (দুই) জন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করিবে৷

(৫) বাছাই কমিটিতে ভোটের সমতার ক্ষেত্রে সভাপতির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের অধিকার থাকিবে৷

(৬) বাছাই কমিটি উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে৷

(৭) শুধুমাত্র কোন সদস্যপদে শূন্যতা বা বাছাই কমিটি গঠনে ত্রুটি থাকিবার কারণে, উহার কোন কার্য বা কার্যধারা অবৈধ হইবে না বা তৎ‍সম্পর্কে কোন প্রশ্নও উত্থাপন করা যাইবে না৷
প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের নিয়োগ, মেয়াদ, পদত্যাগ, ইত্যাদি 
১৫৷ (১) রাষ্ট্রপতি, বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে, প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্যান্য তথ্য কমিশনারগণকে নিয়োগ করিবেন৷

(২) ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর অপেক্ষা অধিক বয়স্ক কোন ব্যক্তি প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনার পদে নিয়োগ লাভের বা অধিষ্ঠিত থাকিবার যোগ্য হইবেন না৷

(৩) প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণ নিয়োগ লাভের তারিখ হইতে ৫(পাঁচ) বৎসর কিংবা ৬৭ (সাতষট্টি) বৎসর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত, যেইটি আগে ঘটে, স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন৷

(৪) প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণ একই পদে পুনরায় নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না, তবে কোন তথ্য কমিশনার প্রধান তথ্য কমিশনার পদে নিয়োগ লাভের অযোগ্য হইবেন না৷

(৫) আইন, বিচার, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, তথ্য, সমাজকর্ম, ব্যবস্থাপনা বা জনপ্রশাসনে ব্যাপক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অধিকারী ব্যক্তিগণের মধ্য হইতে প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণ, এই ধারার বিধানাবলী সাপেক্ষে, নিযুক্ত হইবেন৷

(৬) প্রধান তথ্য কমিশনার বা তথ্য কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে যে কোনো সময় স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন৷

(৭) প্রধান তথ্য কমিশনারের পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান তথ্য কমিশনার তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে, নবনিযুক্ত প্রধান তথ্য কমিশনার তাঁহার পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান তথ্য কমিশনার পুনরায় স্বীয় দায়িত্ব পালনে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত জ্যেষ্ঠতম তথ্য কমিশনার প্রধান তথ্য কমিশনার পদের দায়িত্ব পালন করিবেন৷ 
প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের অপসারণ
১৬৷ (১) সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারক যেরূপ কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ কারণ ও পদ্ধতি ব্যতীত প্রধান তথ্য কমিশনার বা কোন তথ্য কমিশনারকে অপসারণ করা যাইবে না৷

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, রাষ্ট্রপতি প্রধান তথ্য কমিশনার বা অন্য কোন তথ্য কমিশনারকে তাহার পদ হইতে অপসারণ করিতে পারিবেন, যদি তিনি -


(ক) কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হন; বা

(খ) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে স্বীয় দায়িত্ব বহির্ভূত অন্য কোন পদে নিয়োজিত হন; বা

(গ) কোন উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতস্থ ঘোষিত হন; বা

(ঘ) নৈতিক স্খলনজনিত কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন৷ 
তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুবিধাদি
১৭৷ প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক, ভাতা, ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হইবে৷ 
তথ্য কমিশনের সভা
১৮। (১) এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, তথ্য কমিশন উহার সভার কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করিতে পারিবে।

(২) প্রধান তথ্য কমিশনার তথ্য কমিশনের সকল সভায় সভাপতিত্ব করিবেন এবং তাহার অনুপস্থিতিতে তথ্য কমিশনারগণের মধ্যে যিনি তথ্য কমিশনার হিসাবে জ্যেষ্ঠতম তিনি সভায় সভাপতিত্ব করিবেন।

(৩) প্রধান তথ্য কমিশনার এবং তথ্য কমিশনারগণের মধ্যে যে কোন ১ (এক) জনের উপস্থিতিতে তথ্য কমিশনের সভার কোরাম গঠিত হইবে।

(৪) তথ্য কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রধান তথ্য কমিশনার এবং অন্যান্য তথ্য কমিশনারগণের একটি করিয়া ভোট থাকিবে এবং ভোটের সমতা ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী ব্যক্তির দ্বিতীয় বা নির্ণায়ক ভোট প্রদানের অধিকার থাকিবে।  
  

বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১২

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ৩য় অধ্যায় (পর্ব ৪)

তৃতীয় অধ্যায়
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
১০। (১) এই আইন কার্যকর হইবার অব্যবহিত পূর্বে বিদ্যমান প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ, এই আইন জারীর ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

(২) এই আইন কার্যকর হইবার পর প্রতিষ্ঠিত কোন কর্তৃপৰ, উক্তরূপ কর্তৃপৰ প্রতিষ্ঠিত হইবার ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কর্তৃপক্ষের প্রত্যেক তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন করিয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

(৩) এই আইন কার্যকর হইবার পর কোন কর্তৃপক্ষ উহার কোন কার্যালয় সৃষ্টি করিলে, উক্তরূপ কার্যালয় সৃষ্টির তারিখ হইতে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে, এই আইনের বিধান অনুযায়ী তথ্য সরবরাহের নিমিত্ত উক্ত কার্যালয় তথা নবসৃষ্ট তথ্য প্রদান ইউনিটের জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করিবে।

(৪) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উপ-ধারা (১), (২) ও (৩) এর অধীন নিয়োগকৃত প্রত্যেক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী, ঠিকানা এবং, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা উক্তরূপ নিয়োগ প্রদানের ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করিবে।

(৫) এই আইনের অধীন দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অন্য যে কোন কর্মকর্তার সহায়তা চাহিতে পারিবেন এবং কোন কর্মকর্তার নিকট হইতে এইরূপ সহায়তা চাওয়া হইলে তিনি উক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেন।

(৬) কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উপ-ধারা (৫) এর অধীন অন্য কোন কর্মকর্তার সহায়তা চাওয়া হইলে এবং এইরূপ সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতার জন্য আইনের কোন বিধান লংঘিত হইলে সেই ক্ষেত্রে এই আইনের অধীন দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে ক্ষেত্রে উক্ত অন্য কর্মকর্তাও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলিয়া গণ্য হইবেন। 

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১২

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ২য় অধ্যায় (পর্ব ৩)

দ্বিতীয় অধ্যায়
তথ্য অধিকার, তথ্য সংরক্ষণ, প্রকাশ ও প্রাপ্তি
 তথ্য অধিকার
৪৷ এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে৷
তথ্য সংরক্ষণ
৫৷ (১) এই আইনের অধীন তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার যাবতীয় তথ্যের ক্যাটালগ এবং ইনডেক্স প্রস্তুত করিয়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ করিবে৷
(২) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ যেই সকল তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণের উপযুক্ত বলিয়া মনে করিবে সেই সকল তথ্য, যুক্তিসংগত সময়সীমার মধ্যে, কম্পিউটারে সংরক্ষণ করিবে এবং তথ্য লাভের সুবিধার্থে সমগ্র দেশে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উহার সংযোগ স্থাপন করিবে৷

(৩) তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবে৷
তথ্য প্রকাশ
৬। (১) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকান্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয়, এইরূপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে কোন কর্তৃপক্ষ কোন তথ্য গোপন করিতে বা উহার সহজলভ্যতাকে সঙ্কুচিত করিতে পারিবে না।

(৩) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করিবে যাহাতে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকিবে, যথা :-

(ক) কর্তৃপক্ষের সাংগঠনিক কাঠামোর বিবরণ, কার্যক্রম, কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের দায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার বিবরণ বা পদ্ধতি;

(খ) কর্তৃপক্ষের সকল নিয়ম-কানুন, আইন, অধ্যাদেশ, বিধিমালা, প্রবিধানমালা, প্রজ্ঞাপন, নির্দেশনা, ম্যানুয়্যাল, ইত্যাদির তালিকাসহ উহার নিকট রক্ষিত তথ্যসমূহের শ্রেণী- বিন্যাস;

(গ) কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে কোন ব্যক্তি যে সকল শর্তে লাইসেন্স, পারমিট, অনুদান, বরাদ্দ, সম্মতি, অনুমোদন বা অন্য কোন প্রকার সুবিধা গ্রহণ করিতে পারিবেন উহার বিবরণ এবং উক্তরূপ শর্তের কারণে তাহার সহিত কোন প্রকার লেনদেন বা চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজন হইলে সেই সকল শর্তের বিবরণ;

(ঘ) নাগরিকদের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করিবার জন্য প্রদত্ত সুবিধাদির বিবরণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম, পদবী, ঠিকানা এবং, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্স নম্বর ও ই-মেইল ঠিকানা।

(৪) কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কোন নীতি প্রণয়ন বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলে ঐ সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রকাশ করিবে এবং, প্রয়োজনে, ঐ সকল নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমর্থনে যুক্তি ও কারণ ব্যাখ্যা করিবে।

(৫) এই ধারার অধীন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত প্রতিবেদন বিনামূল্যে সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য সহজলভ্য করিতে হইবে এবং উহার কপি নামমাত্র মূল্যে বিক্রয়ের জন্য মজুদ রাখিতে হইবে।

(৬) কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত সকল প্রকাশনা জনগণের নিকট উপযুক্ত মূল্যে সহজলভ্য করিতে হইবে।

(৭) কর্তৃপক্ষ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অথবা অন্য কোন পন্থায় প্রচার বা প্রকাশ করিবে।

(৮) তথ্য কমিশন, প্রবিধান দ্বারা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তথ্য প্রকাশ, প্রচার ও প্রাপ্তির জন্য অনুসরণীয় নির্দেশনা প্রদান করিবে এবং সকল কর্তৃপক্ষ উহা অনুসরণ করিবে।
কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়
৭৷ এই আইনের অন্যান্য বিধানাবলীতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন কর্তৃপক্ষ কোন নাগরিককে নিম্নলিখিত তথ্যসমূহ প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবে না, যথাঃ -
(ক) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(খ) পররাষ্ট্রনীতির কোন বিষয় যাহার দ্বারা বিদেশী রাষ্ট্রের অথবা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা বা আঞ্চলিক কোন জোট বা সংগঠনের সহিত বিদ্যমান সম্পর্ক ক্ষুণ্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(গ) কোন বিদেশী সরকারের নিকট হইতে প্রাপ্ত কোন গোপনীয় তথ্য;

(ঘ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন তৃতীয় পক্ষের বুদ্ধিবৃত্তিক সস্পদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হইতে পারে এইরূপ বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক অন্তর্নিহিত গোপনীয়তা বিষয়ক, কপিরাইট বা বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ (Intellectual Property Right) সম্পর্কিত তথ্য;

(ঙ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন বিশেষ ব্যক্তি বা সংস্থাকে লাভবান বা ক্ষতিগ্রস্ত করিতে পারে এইরূপ নিম্নোক্ত তথ্য, যথাঃ


(অ) আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট ও আবগারী আইন, বাজেট বা করহার পরিবর্তন সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য;

(আ) মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার পরিবর্তনজনিত কোন আগাম তথ্য;

(ই) ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা ও তদারকি সংক্রান্ত কোন আগাম তথ্য;


(চ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ বাধাগ্রস্ত হইতে পারে বা অপরাধ বৃদ্ধি পাইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(ছ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইতে পারে বা বিচারাধীন মামলার সুষ্ঠু বিচার কার্য ব্যাহত হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(জ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা ক্ষুণ্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(ঝ) কোন তথ্য প্রকাশের ফলে কোন ব্যক্তির জীবন বা শারীরিক নিরাপত্তা বিপদাপন্ন হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(ঞ) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তার জন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক গোপনে প্রদত্ত কোন তথ্য;

(ট) আদালতে বিচারাধীন কোন বিষয় এবং যাহা প্রকাশে আদালত বা ট্রাইবুনালের নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে অথবা যাহার প্রকাশ আদালত অবমাননার শামিল এইরূপ তথ্য;

(ঠ) তদন্তাধীন কোন বিষয় যাহার প্রকাশ তদন্ত কাজে বিঘ্ন ঘটাইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(ড) কোন অপরাধের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং অপরাধীর গ্রেফতার ও শাস্তিকে প্রভাবিত করিতে পারে এইরূপ তথ্য;

(ঢ) আইন অনুসারে কেবল একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে এইরূপ তথ্য;

(ণ) কৌশলগত ও বাণিজ্যিক কারণে গোপন রাখা বাঞ্ছনীয় এইরূপ কারিগরী বা বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ কোন তথ্য;

(ত) কোন ক্রয় কার্যক্রম সম্পূর্ণ হইবার পূর্বে বা উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট ক্রয় বা উহার কার্যক্রম সংক্রান্ত কোন তথ্য ;

(থ) জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিকার হানির কারণ হইতে পারে এইরূপ তথ্য;

(দ) কোন ব্যক্তির আইন দ্বারা সংরক্ষিত গোপনীয় তথ্য;

(ধ) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বা পরীক্ষায় প্রদত্ত নম্বর সম্পর্কিত আগাম তথ্য;

(ন) মন্ত্রিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপনীয় সার-সংক্ষেপসহ আনুষঙ্গিক দলিলাদি এবং উক্তরূপ বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত কোন তথ্যঃ

তবে শর্ত থাকে যে, মনিপরিষদ বা, ক্ষেত্রমত, উপদেষ্টা পরিষদ কর্তৃক কোন সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবার পর অনুরূপ সিদ্ধান্তের কারণ এবং যে সকল বিষয়ের উপর ভিত্তি করিয়া সিদ্ধান্তটি গৃহীত হইয়াছে উহা প্রকাশ করা যাইবে৷

আরো শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীন তথ্য প্রদান স্থগিত রাখিবার ক্ষেত্রে সংশিস্নষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য কমিশনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করিতে হইবে।
তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ

৮৷ (১) কোন ব্যক্তি এই আইনের অধীন তথ্য প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট তথ্য চাহিয়া লিখিতভাবে বা ইলেক্ট্রনিক মাধ্যম বা ই-মেইলে অনুরোধ করিতে পারিবেন৷

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অনুরোধে নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের উল্লেখ থাকিতে হইবে, যথাঃ-

(অ) অনুরোধকারীর নাম, ঠিকানা, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, ফ্যাক্সের নম্বর এবং ই-মেইল ঠিকানা;

(আ) যে তথ্যের জন্য অনুরোধ করা হইয়াছে উহার নির্ভুল এবং স্পষ্ট বর্ণনা;

(ই) অনুরোধকৃত তথ্যের অবস্থান নির্ণয়ের সুবিধার্থে অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রাসঙ্গিক তথ্যাবলী; এবং

(ঈ) কোন পদ্ধতিতে তথ্য পাইতে আগ্রহী উহার বর্ণনা অর্থাৎ পরিদর্শন করা, অনুলিপি নেওয়া, নোট নেওয়া বা অন্য কোন অনুমোদিত পদ্ধতি৷


(৩) এই ধারার অধীন তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মুদ্রিত ফরমে বা, ক্ষেত্রমত, নির্ধারিত ফরমেটে হইতে হইবেঃ

তবে শর্ত থাকে যে, ফরম মুদ্রিত বা সহজলভ্য না হইলে কিংবা ফরমেট নির্ধারিত না হইলে, উপ-ধারা (২) এ উল্লিখিত তথ্যাবলী সন্নিবেশ করিয়া সাদা কাগজে বা, ক্ষেত্রমত, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বা ই-মেইলেও তথ্য প্রাপ্তির জন্য অনুরোধ করা যাইবে৷

(৪) উপ-ধারা (১) এর অধীন তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনুরোধকারীকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক উক্ত তথ্যের জন্য নির্ধারিত যুক্তিসংগত মূল্য পরিশোধ করিতে হইবে৷

(৫) সরকার, তথ্য কমিশনের সহিত পরামর্শক্রমে এবং সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ ফিস এবং, প্রয়োজনে, তথ্যের মূল্য নির্ধারণ করিয়া দিতে পারিবে এবং, ক্ষেত্রমত, কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-শ্রেণীকে কিংবা যে কোন শ্রেণীর তথ্যকে উক্ত মূল্য প্রদান হইতে অব্যাহতি প্রদান করিতে পারিবে৷

(৬) প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ, তথ্য কমিশনের নির্দেশনা অনুসরণে, বিনামূল্যে যে সকল তথ্য সরবরাহ করা হইবে উহার একটি তালিকা প্রস্তুত করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে৷ 
তথ্য প্রদান পদ্ধতি
৯৷ (১) দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন অনুরোধ প্রাপ্তির তারিখ হইতে অনধিক ২০ (বিশ) কার্য দিবসের মধ্যে অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিবেন৷

(২) উপ-ধারা (১) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, অনুরোধকৃত তথ্যের সহিত একাধিক তথ্য প্রদান ইউনিট বা কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা থাকিলে অনধিক ৩০ (ত্রিশ) কার্য দিবসের মধ্যে উক্ত অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করিতে হইবে৷

(৩) উপ-ধারা (১) ও (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোন কারণে তথ্য প্রদানে অপারগ হইলে অপারগতার কারণ উল্লেখ করিয়া আবেদন প্রাপ্তির ১০ (দশ) কার্য দিবসের মধ্যে তিনি উহা অনুরোধকারীকে অবহিত করিবেন৷

(৪) উপ-ধারা (১) এবং (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন অনুরোধকৃত তথ্য কোন ব্যক্তির জীবন-মৃত্যু, গ্রেফতার এবং কারাগার হইতে মুক্তি সম্পর্কিত হইলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুরোধ প্রাপ্তির ২৪ (চব্বিশ) ঘন্টার মধ্যে উক্ত বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করিবেন৷

(৫) উপ-ধারা (১), (২) বা (৪) এ উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে তথ্য সরবরাহ করিতে কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যর্থ হইলে সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে৷

(৬) কোন অনুরোধকৃত তথ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট সরবরাহের জন্য মজুদ থাকিলে তিনি উক্ত তথ্যের যুক্তিসংগত মূল্য নির্ধারণ করিবেন এবং উক্ত মূল্য অনধিক ৫ (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে পরিশোধ করিবার জন্য অনুরোধকারীকে অবহিত করিবেন৷

(৭) উপ-ধারা (৬) এর অধীন মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানের প্রকৃত ব্যয় যেমন- তথ্যের মুদ্রিত মূল্য, ইলেক্ট্রনিক ফরমেট এর মূল্য কিংবা ফটোকপি বা প্রিন্ট আউট সংক্রান্ত যে ব্যয় হইবে উহা হইতে অধিক মূল্য নির্ধারণ করা যাইবে না৷

(৮) ধারা ৮ এর উপ-ধারা (১) এর অধীন অনুরোধকৃত তথ্য প্রদান করা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট যথাযথ বিবেচিত হইলে এবং যেক্ষেত্রে উক্ত তথ্য তৃতীয় পক্ষ কর্তৃক সরবরাহ করা হইয়াছে কিংবা উক্ত তথ্যে তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ জড়িত রহিয়াছে এবং তৃতীয় পক্ষ উহা গোপনীয় তথ্য হিসাবে গণ্য করিয়াছে সেইক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্তরূপ অনুরোধ প্রাপ্তির ৫ (পাঁচ) কার্য দিবসের মধ্যে তৃতীয় পক্ষকে উহার লিখিত বা মৌখিক মতামত চাহিয়া নোটিশ প্রদান করিবেন এবং তৃতীয় পক্ষ এইরূপ নোটিশের প্রেক্ষিতে কোন মতামত প্রদান করিলে উহা বিবেচনায় লইয়া দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনুরোধকারীকে তথ্য প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন৷

(৯) ধারা ৭ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, তথ্য প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, এইরূপ তথ্যের সহিত সম্পর্কযুক্ত হইবার কারণে কোন অনুরোধ সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করা যাইবে না এবং অনুরোধের যতটুকু অংশ প্রকাশের জন্য বাধ্যতামূলক নয় এবং যতটুকু অংশ যৌক্তিকভাবে পৃথক করা সম্ভব, ততটুকু অংশ অনুরোধকারীকে সরবরাহ করিতে হইবে৷

(১০) কোন ইন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে কোন রেকর্ড বা উহার অংশবিশেষ জানাইবার প্রয়োজন হইলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উক্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে তথ্য লাভে সহায়তা প্রদান করিবেন এবং পরিদর্শনের জন্য যে ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তাহা প্রদান করাও এই সহায়তার অন্তর্ভুক্ত বলিয়া গণ্য হইবে৷  
 
  

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ধারা (২য় পর্ব )

প্রথম অধ্যায়
প্রারম্ভিক
১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন৷
২৷ সংজ্ঞা৷
৩৷ আইনের প্রাধান্য
দ্বিতীয় অধ্যায়
তথ্য অধিকার, তথ্য সংরক্ষণ, প্রকাশ ও প্রাপ্তি
৪৷ তথ্য অধিকার৷
৫৷ তথ্য সংরক্ষণ৷
৬৷ তথ্য প্রকাশ৷
৭৷ কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়৷
৮৷ তথ্য প্রাপ্তির অনুরোধ৷
৯৷ তথ্য প্রদান পদ্ধতি৷
তৃতীয় অধ্যায়
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
১০৷ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৷
চতুর্থ অধ্যায়
তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা, ইত্যাদি
১১৷ তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা৷
১২৷ তথ্য কমিশন গঠন৷
১৩৷ তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও কার্যাবলী৷
১৪৷ বাছাই কমিটি৷
১৫৷ প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের নিয়োগ, মেয়াদ, পদত্যাগ, ইত্যাদি৷
১৬৷ প্রধান তথ্য কমিশনার ও তথ্য কমিশনারগণের অপসারণ৷
১৭৷ তথ্য কমিশনারগণের পদমর্যাদা, পারিশ্রমিক ও সুবিধাদি৷
১৮৷ তথ্য কমিশনের সভা৷
পঞ্চম অধ্যায়
তথ্য কমিশনের আর্থিক বিষয়াদি
১৯৷ তথ্য কমিশন তহবিল৷
২০৷ বাজেট৷
২১৷ তথ্য কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা৷
২২৷ হিসাব রক্ষণ ও নিরীক্ষা৷
ষষ্ঠ অধ্যায়
তথ্য কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারী
২৩৷ তথ্য কমিশনের সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী৷
সপ্তম অধ্যায়
আপীল, অভিযোগ, ইত্যাদি
২৪৷ আপীল, নিস্পত্তি ইত্যাদি৷
২৫৷ অভিযোগ দায়ের, নিস্পত্তি ইত্যাদি ৷
২৬৷ প্রতিনিধিত্ব৷
২৭৷ জরিমানা, ইত্যাদি৷
২৮৷ Limitation Act, 1908এর প্রয়োগ৷
২৯৷ মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা৷
অষ্টম অধ্যায়
বিবিধ
৩০৷ তথ্য কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন৷
৩১৷ সরল বিশ্বাসে কৃত কাজকর্ম রক্ষণ৷
৩২। কতিপয় সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য নহে
৩৩৷ বিধি প্রণয়ন ক্ষমতা৷
৩৪৷ প্রবিধান প্রণয়ন ক্ষমতা৷
৩৫৷ অস্পষ্টতা দূরীকরণ৷
৩৬৷ ইংরেজীতে অনূদিত পাঠ প্রকাশ৷
৩৭। রহিতকরণ ও হেফাজত

তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ ১ম পর্ব

তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত বিধান করিবার লক্ষ্যে প্রণীত আইন।
 
       যেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতা নাগরিকগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত এবং তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ; এবং

       যেহেতু জনগণ প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক ও জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক; এবং

       যেহেতু জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা হইলে সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাইবে, দুর্নীতি হ্রাস পাইবে ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হইবে; এবং

       যেহেতু সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং সরকারী ও বিদেশী অর্থায়নে সৃষ্ট বা পরিচালিত বেসরকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বিধান করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;

       সেহেতু এতদ্দ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইল :- 
 
১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন।-(১) এই আইন তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ নামে অভিহিত হইবে। (২) এই আইনের -
(ক) ধারা ৮, ২৪ এবং ২৫ ব্যতিত অন্যান্য ধারা ২০ অক্টোবর, ২০০৮ তারিখে কার্যকর হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে; এবং
(খ) ৮, ২৪ এবং ২৫ ধারা ১লা জুলাই, ২০০৯ তারিখ হইতে কার্যকর হইবে।



২। সংজ্ঞা ।-বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থী না হইলে, এই আইনে -
(ক) ‘‘আপীল কর্তৃপক্ষ’’ অর্থ -
(অ) কোন তথ্য প্রদান ইউনিটের ক্ষেত্রে উক্ত ইউনিটের অব্যবহিত ঊর্ধ্বতন
কার্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান; অথবা
(আ) কোন তথ্য প্রদান ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কার্যালয় না থাকিলে, উক্ত তথ্য প্রদান
ইউনিটের প্রশাসনিক প্রধান;
(খ) ‘‘কর্তৃপক্ষ’’ অর্থ -
(অ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সৃষ্ট কোন সংস্থা;
(আ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৫(৬) অনুচ্ছেদের অধীন প্রণীত কার্য
বিধিমালার অধীন গঠিত সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়;
(ই) কোন আইন দ্বারা বা উহার অধীন গঠিত কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
(ঈ) সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত বা সরকারী তহবিল হইতে সাহায্যপুষ্ট কোন
বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
(উ) বিদেশী সাহায্যপুষ্ট কোন বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
(ঊ) সরকারের পক্ষে অথবা সরকার বা সরকারী কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের সহিত
সম্পাদিত চুক্তি মোতাবেক সরকারী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন
বেসরকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান; বা
(ঋ) সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত অন্য কোন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান;
(গ) ‘‘কর্মকর্তা’’ অর্থে কর্মচারীও অমত্মর্ভুক্ত হইবে;
(ঘ) ‘‘তথ্য প্রদান ইউনিট’’ অর্থ -
(অ) সরকারের কোন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা কার্যালয়ের সহিত সংযুক্ত বা অধীনস্থ কোন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়;
(আ) কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়, বিভাগীয় কার্যালয়, আঞ্চলিক কার্যালয়, জেলা
কার্যালয় বা উপজেলা কার্যালয়;

(ঙ) ‘‘তথ্য কমিশন’’ অর্থ ধারা ১১ এর অধীন প্রতিষ্ঠিত তথ্য কমিশন;
(চ) ‘‘তথ্য’’ অর্থে কোন কর্তৃপক্ষের গঠন, কাঠামো ও দাপ্তরিক কর্মকান্ড সংক্রান্ত যে কোন স্মারক, বই, নকশা, মানচিত্র, চুক্তি, তথ্য-উপাত্ত, লগ বহি, আদেশ, বিজ্ঞপ্তি, দলিল, নমুনা, পত্র, প্রতিবেদন, হিসাব বিবরণী, প্রকল্প প্রসত্মাব, আলোকচিত্র, অডিও, ভিডিও, অংকিতচিত্র, ফিল্ম, ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়ায় প্রস্ত্ততকৃত যে কোন ইনস্ট্রুমেন্ট, যান্ত্রিকভাবে পাঠযোগ্য দলিলাদি এবং ভৌতিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য নির্বিশেষে অন্য যে কোন তথ্যবহ বস্ত্ত বা উহাদের প্রতিলিপিও ইহার অমত্মর্ভুক্ত হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, দাপ্তরিক নোট সিট বা নোট সিটের প্রতিলিপি ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে না;
(ছ) ‘‘তথ্য অধিকার’’ অর্থ কোন কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার;
(জ) ‘‘তফসিল’’ অর্থ এই আইনের তফসিল;
(ঝ) ‘‘তৃতীয় পক্ষ’’ অর্থ তথ্য প্রাপ্তির জন্য অনুরোধকারী বা তথ্য প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অনুরোধকৃত তথ্যের সহিত জড়িত অন্য কোন পক্ষ;
(ঞ) ‘‘দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’’ অর্থ ধারা ১০ এর অধীন নিযুক্ত কর্মকর্তা;
(ট) ‘‘নির্ধারিত’’ অর্থ বিধি বা প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত;
(ঠ) ‘‘প্রবিধান’’ অর্থ ধারা ৩৪ এর অধীন প্রণীত কোন প্রবিধান;
(ড) ‘‘বাছাই কমিটি’’ অর্থ ধারা ১৪ এর অধীন গঠিত বাছাই কমিটি;
(ঢ) ‘‘বিধি’’ অর্থ ধারা ৩৩ এর অধীন প্রণীত কোন বিধি।



৩। আইনের প্রাধান্য। -প্রচলিত অন্য কোন আইনের -
(ক) তথ্য প্রদান সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলী দ্বারা ক্ষুণ্ন হইবে না; এবং
(খ) তথ্য প্রদানে বাধা সংক্রান্ত বিধানাবলী এই আইনের বিধানাবলীর সহিত সাংঘর্ষিক হইলে, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।



রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

স্নায়ুযুদ্ধ

স্নায়ুযুদ্ধ বা শীতলযুদ্ধ ( Cold War; ) হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রসমূহ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রসমূহের মধ্যকার টানাপোড়েনের নাম। ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৮০'র দশকের শেষ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। প্রায় পাঁচ দশকব্যাপী সময়কালে এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির চেহারা নিয়ন্ত্রণ করত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের স্বপক্ষে; আর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র দেশসমূহ ছিল সাম্যবাদী বা সমাজতন্ত্রপন্থী। স্নায়ুযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও কানাডা। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে ছিল পূর্ব ইউরোপের অনেক রাষ্ট্র, যেমন বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রোমানিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের কিছুকাল যাবৎ কিউবা এবং চীন সোভিয়েতদের সমর্থন দেয়। যেসমস্ত দেশ দুই পক্ষের কাউকেই সরকারিভাবে সমর্থন করত না, তাদেরকে নিরপেক্ষ দেশ বলা হত। তৃতীয় বিশ্বের নিরপেক্ষ দেশগুলি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশ ছিল। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের নাটকীয় পরিবর্তন ও পতনের মধ্য দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।
এই বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনাকে ইংরেজিতে 'Cold War' কথাটি দিয়ে সর্বপ্রথম সূচিত করেন মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপমান, ১৯৪৭ সালে, তাঁর একই শিরোনামের বইতে।


বিশ্বায়ন

বিশ্বায়ন (globalization) পারষ্পরিক ক্রিয়া এবং আন্তঃসংযোগ সৃষ্টিকারী এমন একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন জাতির সরকার, প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে সমন্বয় ও মিথস্ক্রিয়ার সূচনা করে। এই পদ্ধতির চালিকাশক্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ, আর এর প্রধান সহায়ক শক্তি হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি। পরিবেশ, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক পদ্ধতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রগতি এবং মানবিক ও সামাজিক অগ্রগতি; সকল কিছুর উপরই এর সুস্পষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। বিশ্বায়ন বিষয়টি নিয়ে আক্ষরিক অর্থে গবেষণা নতুন করে শুরু হলেও এই ব্যাপরটি বেশ প্রাচীনই বলতে হবে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। যদিও তখন কোন সাধারণ নীতিমালা ছিল না। হাজার বছর পূর্বে মধ্যযুগে সিল্ক রোড ধরে ইউরোপের সাথে মধ্য এশিয়া হয়ে চীনের বাণিজ্য চলতো।


এক কথায় বলতে বিশ্বায়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থাসমূহ বিশ্ব জুড়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক গড়ে তোলে.
এখন বিশ্বায়ন এর মডেলটি কেমন হতে পারে ?  এইযে আমরা ব্লগ লিখছি বা পরছি এগুলোকে আমরা তার মডেল হিসেবে আনতে পারি । google সারা বিশ্বের মানুষ জানে । তা ব্যবহার করে । এতে সারা বিশ্বের মানুশের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এখন একটা দেশ যদি বাংলাদেশে  বিনিয়োগ করে তাহলে আমাদের সাথে তাদের অর্থনীতির একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে। আবার অলিম্পিক গেইমস হবে সামনে তখন সারা বিস্বের মানুষ এক কাতারে চলে আসবে। অনেক দেশের মাঝে নতুন সম্পর্ক হবে । তারপর ধরি linkin park  যেটি বিস্বের অনেক জনপ্রিয় ব্যান্ড। আর জনপ্রিয়তার পিছনের কারন হচ্ছে এই বিশ্বায়ন । 


তারমানে খুব সহজ করে বললে বিশ্বায়ন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখি। 


এখন কোন বিষয় গুলোতে তা গড়ে উঠে ।অর্থনীতি, সামাজিক ব্যবস্থা, শিক্ষা , সংস্কৃতি সহ অনেক কিছু তে। এটি হতে মাঝে নিয়ামক হয়ে দাড়ায় তথ্য প্রযুক্তি। যার কাছে প্রযুক্তি ভালো সে সহজেই অন্য দেশের থেকে এগিয়ে থাকবে এবং পিছিয়ে পড়া দেশটি তাদের সাথে থাকতে চাবে নিজেদের উন্নতির জন্য । তখন দেখা যায় উন্নত দেশটি সহয়তা করতে এগিয়ে আসে এবং নানা নিজেদের অনেক কিছু সেই দেশে প্রবেশ করিয়ে দেয়। ঋণ দেয় , নিজেরা তাদের প্রকল্পে অর্থায়ন করে । এভাবেই বেড়ে উঠে বিশ্বায়নের মডেল।